একজন সাহাবি যখন ইন্তেকাল করেন, ঋণ রেখে যান প্রায় ১৮০ কোটি টাকা (২২ লক্ষ দিরহাম)!
ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব দিয়ে যান ছেলের কাঁধে। কিন্তু, ঋণ পরিশোধ করার মতো একটি দিনার-দিরহাম রেখে যাননি।
তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী এসে জানতে চাইলে যখন বলা হয় ২২ লক্ষ দিরহাম ঋণ রেখে যান, সবার চক্ষু চড়কগাছ। এতো অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে। সাহাবীরা আশঙ্কা করেন, তাঁর এই ঋণ শোধ হবে না। ঋণ শোধ করতে গেলে পরিবার দেউলিয়া হয়ে যাবে।
কিন্তু, তাদের অনেকেই জানতেন না তাঁর জায়গা-জমির কথা। তৎকালীন বিভিন্ন দেশে তাঁর প্লট ছিলো। গাবা, মদীনা, মিশর, বসরা, কুফা শহরে তাঁর ১৫ টির বেশি জমি ছিলো। আমাদের সময়ের পরিভাষায় তিনি ছিলেন জমি ব্যবসায়ী। জমি কেনা-বেচা করতেন।
তাঁর শাহাদাতবরণের পর ছেলে বাবার ঋণ পরিশোধ শুরু করেন জমি বিক্রি করে। বাবা একটি জমি কিনেছিলেন ১ লক্ষ ৭০ হাজার দিরহাম দিয়ে। ছেলে সেই জমি বিক্রি করেন ১৬ লক্ষ দিরহামে। এক জমিতেই ১৪ লক্ষ ৩০ হাজার দিরহাম লাভ; প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি!
বেশ দক্ষতার সাথে ছেলে সবার ঋণ পরিশোধ করে। যখন ঋণদাতা একজনও বাকি থাকলেন না, তখন বাবার সমস্ত জমি বিক্রি করলেন তাঁর সুযোগ্য পুত্র।
জমি বিক্রি করে পাওয়া গেলো ৫ কোটি ২ লক্ষ দিরহাম। এই অর্থ দিয়ে সেইসময় অন্তত ৪১ লক্ষ ভেড়া কেনা যেতো। প্রতিটি ভেড়ার দাম ১০ হাজার টাকা ধরলে সেই সাহাবীর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি!
সেই সাহাবী দুনিয়ায় থাকাবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ পান। তাঁর নাম যুবাইর ইবনুল আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু; নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন ফুফাতো ভাই।
তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু দক্ষতার সাথে বাবার ঋণ পরিশোধ করেন।
অনেকেই মনে করেন সাহাবিরা গরিব ছিলেন বলে অভুক্ত থাকতেন, ছেঁড়া জামা পরতেন, তালিযুক্ত জামা ব্যবহার করতেন। সাহাবিদের অনাড়ম্বর জীবনযাপনের পেছনে মূল কারণ কি অভাব-অনটন?
কিন্তু আসল চিত্র ভিন্ন। খায়বার বিজয়ের পর মদিনার সমাজে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি শুরু হয়, সেই ধারা অব্যাহত থাকে। সাহাবিদের অর্থনৈতিক জীবনে আসে আমূল পরিবর্তন। উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে বেশিরভাগ সাহাবি ধনী হন। ধনী হবার সাথে সাথে তারা নিজেদের জীবনযাত্রায় দৃশ্যমান পরিবর্তন করেননি; আগের মতো সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন।
অন্যদিকে, অনেক সাহাবি প্রথমযুগেই কোটিপতি ছিলেন। তারা ব্যবসা করতেন। যেমন: উসমান রাদি., আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদি., তালহা রাদি.।
• ইন্তেকালের পূর্বে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদি. –এর সম্পদের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৭৭০ কোটি টাকা
• তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহর সম্পদের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা
• যুবাইর ইবনুল আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছিলো প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা
• উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছিলো প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ।
সেইসব সাহাবি দুনিয়ার বুকে জান্নাতের সুসংবাদ পান এবং দুনিয়াতেই তারা ছিলেন কোটিপতি। কীভাবে তারা এতো সম্পদ উপার্জন করেন? কীভাবে তারা ব্যবসা করেন? উপার্জিত সম্পদ কোন কোন খাতে ব্যয় করেন?
‘কোটিপতি সাহাবি’ বইয়ে সাহাবিদের সম্পদ উপার্জন, ব্যবসার গল্প, সম্পদ ব্যয়ের ঘটনাগুলো রেফারেন্স সহ উল্লেখ করা হয়েছে। বইটি সাহাবিদের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিবে, ইন শা আল্লাহ।